Thursday, November 7, 2024
HomeBlogথাকা-খাওয়ার সঙ্গে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধও পাচ্ছেন বানবাসী মানুষ 

থাকা-খাওয়ার সঙ্গে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধও পাচ্ছেন বানবাসী মানুষ 


PHP feni final1
পিএইচপি ইন্টিগ্রেটেড স্টিল মিলসের ডরমিটরিতে আশ্রয় নেয়া বানবাসী মানুষ।

সুপ্রভাত ডেস্ক »

ফেনী ছাগলনাইয়া উপজেলার গোপাল ইউনিয়নের বাসিন্দা গৃহবধূ তাসলিমা আক্তার। নুরুল হক মাঝির বাড়ির এই বাসিন্দার ঘরে গত বৃহস্পতিবার পানি ঢুকতে শুরু করে। কয়েকঘণ্টার মধ্যেই পানি চার ফুট উচ্চতা ছাড়িয়ে যায়। তখনই দ্রুত দুই কন্যা শিশুকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন। পরিস্থিতি এমন যে, বাচ্চাকে কাপড় পরানোর সময় পাননি। ওই অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে আনা হয় নিজকুনজরা পিএইচপি ইন্টিগ্রেটেড স্টিল মিলসের ডরমিটরিতে। পিএইচপি ফ্যামিলির পক্ষ থেকে দেওয়া কাপড় পড়ানো হয় দুই শিশুকে। কেবল তাসলিমা আক্তার নয়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় এক হাজার মানুষের আশ্রয় মিলেছে এখানে।

নব্বই বছরের বৃদ্ধ থেকে শুরু করে ১৮ বছরের তরুণরা যেমন এখানে আশ্রয় নিয়েছেন তেমনি কিশোর-বিশোরী ও ছোট ছোট শিশুরাও এসেছেন। আছেন গর্ভবতী নারীও। স্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখার পাশাপাশি প্রতিদিন তিনবেলা খাবার দেওয়া হচ্ছে। আশ্রয় নেওয়া বানবাসী মানুষকে চিকিৎসা দিতে রয়েছে ৬ জনের একটি মেডিকেল টিম। চিকিৎসা পরবর্তী প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হচ্ছে পিএইচপি ফ্যামিলির পক্ষ থেকে। পাচ্ছেন জামা-কাপড়ও। অর্থাৎ এখানে যারা আশ্রয় নিয়েছেন তাদের প্রয়োজন মেটানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছেন প্রতিষ্ঠানের নিবেদিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কারখানা বন্ধ রেখে আশ্রয় নেওয়া মানুষের সেবায় নিয়োজিত তারা। পাশাপশি বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের কাছে পাঠানো হচ্ছে ত্রাণ সামগ্রী।

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার ফেনী ও মিরসরাই এলাকায় বন্যার কবলে পড়লে কারখানা বন্ধ রেখে বানভাসি মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয় কারখানার গেইট। নিজস্ব একাধিক বোটে করে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করা হয়। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই তিনটি ভবনে আশ্রয় নিতে থাকে বন্যা কবলিত ঘরহারা মানুষ। তাদের জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত রাখা হয়; কাপড়, ওষুধ ও খাবার।

পিএইচপি ইন্টিগ্রেটেড স্টিল মিলসের প্ল্যান্ট ম্যানেজার বিন্দু নাথ জানান, ডরমিটরিসহ তিনটি ভবনে বিভিন্ন বয়সের মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের জন্য খাবার, ওষুধ, বিশুদ্ধ পানি ও কাপড়ের ব্যবস্থা করেছি। একই সঙ্গে প্রতিদিন আমরা ঘরে ঘরে গিয়ে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি।

সোমবার (২৬ আগস্ট) পাঁচ শতাধিক পরিবারকে ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। আশ্রয়ে রয়েছেন প্রায় এক হাজার মানুষ। তাদের গত রবিবার পর্যন্ত তিনবেলা রান্না করা খাবার দেওয়া হয়েছে। শিশুদের জন্য দেওয়া হয়েছে বিশেষ খাবার। পোশাক, নারীদের জন্য স্যানিটারি প্রোডাক্ট রাখা হয়েছে। ছয়জনের একটি মেডিক্যাল টিম চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। ওষুধের ব্যবস্থাও আমরা করেছি।

তিনি বলেন, প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে আমাদের মালিকপক্ষ আমাদের কারখানার দরজা খুলে দেওয়ার নির্দেশনা দেন; যাতে সব বন্যা কবলিত মানুষ এখানে আশ্রয় নিতে পারে। এরই মধ্যে প্রায় ৮ হাজার পরিবারে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানো হয়েছে। মানুষের পাশাপাশি এখানে অন্তত অর্ধ শতাধিক গবাদি পশু রাখার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।

পিএইচপি ফ্যামিলির এই মানবিক উদ্যোগটি বন্যা দুর্গত মানুষদের জন্য একটি বড় সহায়তা হিসেবে এসেছে এবং সমাজের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে মনে এখানে আশ্রয় নেওয়া মানুষেরা। তারা বলছেন, এতগুলো মানুষকে এভাবে সব রকমের সেবা দেওয়া সত্যিই অনেক কষ্টের। কিন্তু শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক নিরবে কাজটি করে যাচ্ছেন।

মুহুরিগঞ্জের ৭০ বছরের বৃদ্ধা আংকুরেন্নেছা এসেছেন ৪ ছেলের বউ, দুই ছেলে ও ছয় নাতি-নাতনিকে নিয়ে। দুই ছেলে আবুধাবী প্রবাসী। মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকায় যোগাযোগ হচ্ছে না ছেলেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, তারা বিদেশে মায়ের জন্য চিন্তা করতেছে। আশ্রয়কেন্দ্রে কেমন আছেন? উত্তরে তিনি বলেন,‘এতো মাইষ্যের খানা দেওন কী সহজ কথা; আমরা সময়মতো নাস্তা-খাবার পাচ্ছি। কোম্পানির লোকজন এসে দিয়ে যায়। আল্লাহ তাদের হায়াত দিক।’

স্ত্রী, ছেলে ও ভাইয়ের স্ত্রী ও দুই নাতিকে নিয়ে এসেছেন গোপাল ইউনিয়নের ৮০ বছরের বৃদ্ধ কবির আহম্মদ। গত বৃহস্পতিবার থেকে তারা এখানে আছেন। সবকিছু ঠিকমতো পাচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, নাতি অসুস্থ হলে এখানের ডাক্তার দেখে ওষুধ দিয়েছেন। স্বামী-শাশুড়ি, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে এসেছেন ৪০ বছর বয়সী গৃহবধূ লায়লা আক্তার। তিনি বলেন, আমরা এখানে সবকিছু পাচ্ছি। এখন পানি কমে আসছে। কিন্তু এখান থেকে বাড়ি গিয়ে কী করবো; সেটাই বুঝতে পারছি না। আমাদের এমন অবস্থা ঘরেও যেতে পারবো না; কারণ ঘর পানিতে তলিয়ে সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে।

প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সেনা বাহিনীর সার্জেন্ট’র স্ত্রী নুরেন্নাহার দুই ছেলেকে নিয়ে এসেছেন। ঘরে বুক সমান পানি উঠে গেলে ট্রলারে করে আশ্রয় কেন্দ্রে আসেন। পিএইচপি ফ্যামিলির আশ্রয়কেন্দ্রে শান্তিতে আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে আমাদের যথেষ্ট আপ্যায়ন করছে। সময়মতো সবকিছু পাচ্ছি; এখানের লোকজন কষ্ট করছে আমাদের জন্য। এভাবে আপ্যায়ন অন্য কেউ করবে কিনা সেটা আমার জানা নেই।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments