Friday, November 22, 2024
HomeBlogএখনও স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি পুলিশ – বাংলাদেশের আলো

এখনও স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি পুলিশ – বাংলাদেশের আলো


বিআলো ডেস্ক: ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছাড়েন সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এদিন বিকেলে রাজধানীসহ সারা দেশে থানাসহ পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। প্রাণ বাঁচাতে থানা রেখে নিরাপদে চলে যান পুলিশ সদস্যরা। বিভিন্ন স্থানে অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুটের ঘটনা ঘটে।

বিক্ষোভকারীদের দেয়া আগুন ও ভাংচুরের পর দেশের পুলিশের সব থানার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

পুলিশ সদর দফতরের তথ্যানুযায়ী, বিক্ষোভকারীদের দেয়া আগুন ও ভাঙচুরে দেশের ৪৫০ থানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) আটটি অপরাধ বিভাগের ৪৩টি থানাই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। গুরুত্বপূর্ণ নথি থেকে শুরু করে কিছুই অবশিষ্ট নেই। আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় থানায় থাকা মামলা ও অন্যান্য নথি। লুটপাট হয় জরুরি সরঞ্জাম। অক্ষত ছিল মাত্র সাতটি থানা।

৫ আগস্ট দেশের থানায় থানায় হামলায় রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর ঘটনায় কয়েক দফা দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করে সারাদেশের পুলিশ সদস্যরা। পরে অন্তবর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুলিশ সদস্যরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দেন। এরপর বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) থেকে দেশের ৬৩৯টি থানার সবগুলোতেই পুলিশি কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়েছে বলে জানায় পুলিশ সদর দফতর।

রাজধানীর কয়েকটি থানা ঘুরে দেখা গেছে, স্বল্পসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতে বিধ্বস্ত কার্যালয়েই শুরু হয়েছে থানার কার্যক্রম। হামলা ও আগুনের ঘটনায় পুলিশের অসংখ্য গাড়ি ও ভবন আগুনে পুড়ে গেছে। এছাড়া অবকাঠামোগত ক্ষতির কারণে থানায় কোন আসামি এনে রাখার সুযোগও নেই। একই সঙ্গে চলছে ভবনের সংস্কার কাজ। থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নেয়া হচ্ছে। রাজধানী ঢাকার শাহবাগ, মিরপুর, তেজগাঁও থানা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

বুধবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মিরপুর মডেল থানায় গিয়ে দেখা যায়, থানার প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন পাঁচজন সেনাসদস্য। থানার মূল গেট দিয়ে ঢুকতেই পরিচয় জিজ্ঞাসা করেন একজন। পরে পরিচয় দেওয়ার পর ভেতরে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়।

মিরপুর মডেল থানা চারতলা ভবন। থানা কোয়ার্টার ঘুরে দেখা গেলো পরিবেশ এখনো স্বাভাবিক হয়নি। পুরো থানা কোয়ার্টারে ৫-৬ জন পুলিশ সদস্যকে পোশাক পরিহিত অবস্থায় দেখা গেছে। আরো বেশ কয়েকজন সাদা পোশাকে ঘোরাফেরা করছেন।

গত ৫ আগস্ট বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে এই থানায় আগুন দেয় বিক্ষোভকারীর। আগুনে পুড়ে চারতলা ভবন পুরোটাই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ায় থানার প্রধান ফটক লাগোয়া ছাউনিতে অস্থায়ী কার্যক্রম চালাতে দেখা যায়। সাধারণ ডায়েরি বা জিডি নিচ্ছেন একজন ডিউটি অফিসার। পাশে বেশকয়েকজন সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্য বসে আছেন। যারা জিডি করতে আসছেন তাদেরকে থানার পাশের বিভিন্ন দোকান থেকে জিডি লিখে প্রিন্ট করে নিয়ে আসার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারী ডিউটি অফিসার বলেন, আমরা কেবল আজ জরুরি বিষয়ের সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নিচ্ছি। থানার সব পুড়ে যাওয়ায় আমরা অনলাইন কার্যক্রম এখনো শুরু করতে পারিনি।

থানার পুলিশ সদস্যরা কোথায় জানতে চাইলে বলেন, থানার এখন সংস্কার কাজ চলমান আছে। যার কারণে সবাই বাসাবাড়িতে আছেন। আমরা আশা করছি, দ্রুত সব ঠিক হয়ে যাবে।

ভবনটির ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, নিচতলা ও দ্বিতীয়তলার সবকিছু পুড়ে ছাই গেছে। আগুন লাগার ১৪ দিন পার হলেও ভবনের ভেতরে এখনো পোড়া গন্ধ। আগুন দেওয়ার কারণে থানার দেয়াল ও ছাদের অংশ কালো হয়ে আছে। খসে পড়েছে পলেস্তারা। থানার রিসিপশন থেকে শুরু করে হাজতখানা, রান্নাঘর, থাকার কক্ষ সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তবে হাজতখানার বেশ ভেতরের অংশে কিছু নথিপত্র স্তুপ করে রাখা হয়েছে।

তৃতীয় ও চতুর্থ তলায়ও আগুনের তাপ পৌঁছেছে। পুলিশ সদস্যদের পোশাক, আসবাবপত্র আবর্জনার ভাগাড়ের মতো স্তুপ করে করে বিভিন্ন জায়াগায় রাখা। দেখে মনে হয়েছে থানাটিতে এখনো পুরোপুরি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু হয়নি।

থানা কোয়ার্টারে থাকা পুলিশ সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অনেক পুলিশ সদস্য অসুস্থ থাকার কারণে উপস্থিতি কম। এছাড়া থানার বাকি সদস্যরা বাসা বাড়িতে অবস্থান করছেন বলে জানান। তারা জানান, অস্ত্র, গাড়ি, লজিস্টিক সবকিছুরই সংকট থাকার কারণে নিয়মিত অভিযানে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তদন্তের কাজ করাও সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান তারা। প্রতিদিন সেনাবাহিনীর সঙ্গে যৌথ টহল পরিচালনা করছে থানার টিমগুলো।

মিরপুর মডেল থানার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দেখতেই তো পাচ্ছেন কী অবস্থা। সব পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম কবে নাগাদ শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে ডিসি স্যার কথা বলবেন।

কিছুটা ভাঙচুরের মুখে পড়েছে তেজগাঁও থানা। সেখানেও গিয়ে দেখা যায় ডিউটি অফিসার জিডি নিচ্ছেন। থানার এক পুলিশ সদস্য বলেন, থানায় সব পুলিশ সদস্য যোগদান করেছেন। আমরা আমাদের থানাতেই অবস্থান করছি। সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে অল্প আকারে টহল দিচ্ছি। আর শাহবাগ থানায় গিয়ে দেখা গেছে, বিধ্বস্ত থানাতেই চলছে কার্যক্রম। সেখানে দায়িত্বরত ডিউটি অফিসার জানান, জিডি কার্যক্রম নিয়মিত চলছে। থানার কার্যক্রম শুরুর পর থেকে কয়েকশ’ সাধারণ ডায়েরি নেয়া হয়েছে।

পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে ৪৪ জন পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। নিহত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ৩ জন ইন্সপেক্টর, ১১ জন উপ-পরিদর্শক, ৭ জন অতিরিক্ত উপ-পরিদর্শক, একজন সহকারী উপ-পরিদর্শক, একজন নায়েক এবং ২১ জন কনস্টেবল রয়েছেন।

পুলিশ হেডকোয়ার্টারের সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) এনামুল হক সাগর গণমাধ্যমকে বলেন, যে থানাগুলো পুরোপুরিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলোতে লজিস্টিক্যাল সাপোর্ট দিচ্ছি আমরা। আমরা পুলিশের কার্যক্রম পুরোপুরি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি।

ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, তেজগাঁও বিভাগের আদাবর থানাও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে কাজ শুরু করেছে পুলিশ। রমনা বিভাগের সবগুলো থানায় কাজ শুরু করেছে পুলিশ। এই বিভাগের নিউমার্কেট, রমনা ও শাহবাগে হামলা হয়েছিল। তবে থানা ব্যবহার উপযোগী রয়েছে। ওয়ারী বিভাগের যাত্রাবাড়ী থানা সম্পূর্ণ আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। কংক্রিটের কাঠামো থাকলেও সেখানে অবশিষ্ট কিছু নেই।

ডিএমপি সূত্র জানায়, থানাগুলোতে ইন্টারনেট সেবা, ওয়্যারলেস, গাড়ির ব্যবস্থা করা, অস্ত্রের ব্যবস্থাপনার পর টহল কার্যক্রম, পরোয়ানা তামিল, মামলার তদন্ত শুরু হবে।

এদিকে পুলিশ সদর দফতর জানিয়েছে, সারা দেশের সর্বমোট ৬৩৯টি থানার মধ্যে ৬২৮টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে দেশের ১১টি থানা সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবং প্রয়োজনীয় লজিস্টিকস, আসবাবপত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জাম ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ায় এসব থানার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি।

বিআলো/শিলি


Post Views: 1



RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments